August 3, 2025, 4:30 am

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন পোর্টাল
সংবাদ শিরোনাম :
৫ আগস্ট জুলাই ঘোষণাপত্র উপস্থাপন মেহেরপুর সীমান্ত দিয়ে নারী-শিশুসহ ১৭ বাংলাদেশিকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করল বিএসএফ কার্যকর/ যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক দেশে প্রতি চারজনের একজন বহুমাত্রিক দরিদ্র, শিশুদের ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য বছরে ১০-১৫ শতাংশ বিশেষ সুবিধা ঘোষণা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন: মানুষের প্রকৃত আয় এখনো ঋণাত্মক হোমল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স/১ কোটি ৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে যশোরে মামলা গোপন তৎপরতার আশঙ্কা: ১১ দিনের ‘বিশেষ সতর্কতা’ জারি করেছে পুলিশ বিনিয়োগে স্থবিরতা, ভোগ কমেছে জুনে এলসি খোলা ৫ বছরে সর্বনিম্নে কুষ্টিয়ায় বিএনপি কর্মী হত্যা মামলায় সাবেক এসপি তানভীর আরাফাতকে গ্রেপ্তার, চলবে পূর্বের মামলা

শিক্ষাক্রম রূপরেখায় মূল পরিবর্তন, বাস্তবায়নের অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত সরকার

দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
দেশে শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসন্ন। রুপরেখা ঠিক হয়েছে। ২০২৩ সাল থেকেই নতুন রূপরেখায় বদলে যাবে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবই। নতুন এই রূপরেখায় বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে একেবারে মৌলিক হিসেবে প্রবর্তন করা হবে। ২০২৩ সালে এসব চালু হলেও আগামী বছর ২শ স্কুলে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন রূপরেখা অনুযায়ী শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে অন্তত বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে। এগুলোর মধ্যে শীর্ষে আছে পাঠ্যবই এবং পাঠদান। এছাড়া আছে উপযুক্ত শিক্ষক; তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা মূল্যায়ন; দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের শিখনকালীন বা ধারাবাহিক মূল্যায়ন; শিক্ষকের হাতে দেওয়া এই শিখনকালীন মূল্যায়নের স্বচ্ছতা; লেখাপড়ার মতো আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় অভিভাবক ও সামাজিক মূল্যায়ন; উচ্চমাধ্যমিকে দুই পাবলিক পরীক্ষার চাপ; মাধ্যমিকে ব্যবসায় শিক্ষা, ইতিহাস, ভূগোলের মতো বিষয়গুলোর পরিণতি; বিজ্ঞান, মানবিক, বাণিজ্য বিভাগের অনুপস্থিতিতে নবম-দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান শিক্ষার গুরুত্ব। আরও আছে, মাধ্যমিকে বৃত্তিমূলক এবং উচ্চমাধ্যমিকে প্রায়োগিক বিষয় প্রবর্তন ও রূপরেখা বাস্তবায়নে অতিরিক্ত ব্যয়।
মুল পরিবর্তনগুলো মোটাদাগে
→ ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত সকলের জন্য ১০টি বিষয় নির্ধারণ (প্রচলিত মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থাকবে না);
→ পরীক্ষা ও মুখস্থনির্ভর পড়াশোনার পরিবর্তে পারদর্শিতাকে গুরুত্ব দিয়ে দশম শ্রেণি শেষে পাবলিক পরীক্ষা;
→ পরীক্ষার চাপ কমানোর জন্য একাদশ শ্রেণির শিক্ষাক্রমের ভিত্তিতে একাদশ শ্রেণি শেষে এবং দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষাক্রমের ভিত্তিতে দ্বাদশ শ্রেণি শেষে পাবলিক পরীক্ষা;
→ পারদর্শিতা অর্জন নিশ্চিত করা ও মুখস্থনির্ভরতা কমানোর জন্য শিখনকালীন/ধারাবাহিক মূল্যায়ন প্রবর্তন
→ ৯ম ও ১০ম শ্রেণিতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য কৃষি, সেবা বা শিল্প খাতের একটি অকুপেশনের ওপর দক্ষতা অর্জন বাধ্যতামূলক এবং ১০ম শ্রেণি শেষে যেকোনো একটি অকুপেশনে কাজ করার মতো পেশাদারি দক্ষতা অর্জন;
→ মাধ্যমিক স্তরে সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন প্রবর্তন;
→ অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন-শেখানো কার্যক্রম বিদ্যালয়ের বাইরেও (পারিবারিক ও সামাজিক পরিসরে) অনুশীলন:
→ সকল শিক্ষার্থীর অভিন্ন মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনের জন্য স্তরভিত্তিক নির্বাচিত বিষয়ের পাশাপাশি মাদ্রাসা ও কারিগরি শাখার বিশেষায়িত বিষয়গুলোর যৌক্তিক সমন্বয়।
তবে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা মনে করছেন যে কোনো নতুনত্বই চ্যালেঞ্জ থাকবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে প্রতি পাঁচ বছর পরপর শিক্ষাক্রম মূল্যায়ন ও যুগোপযোগী করা হয়ে থাকে। এটি বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় ব্যয় ও পরিশ্রমের প্রস্তুতি সরকারের আছে।
নতুন রূপরেখায় শিক্ষার্থীদের শেখার জন্য দশটি শিখন-ক্ষেত্র উল্লেখ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ১৪টি বছর পড়ানো হবে এসব ক্ষেত্র থেকে। ৪ বছর বয়সে প্রাক-প্রাথমিক ‘মাইনাস টুতে’ (বিদ্যমান ধারণায় নার্সারি) ভর্তি হবে শিক্ষার্থীরা। এরপর উঠবে কেজি স্তরে। কিন্তু তাদের কোনো পাঠ্যবই থাকবে না। তবে বয়স অনুযায়ী ভাষা ও যোগাযোগ এবং গণিত ও যুক্তি থেকে শুরু শিল্প ও সংস্কৃতি পর্যন্ত দশটি বিষয়েই পাঠ শেখানো হবে।
প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত নির্বাচিত বিষয় বা পাঠ্যবই থাকবে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে ৫টি আর উচ্চমাধ্যমিকে প্রতিবর্ষে ৭টি করে বিষয়ে পরীক্ষা থাকবে। এ ক্ষেত্রে সনাতনী পদ্ধতির বিভাগভিত্তিক পাঠ থাকছে না মাধ্যমিকে। মাদ্রাসা ও কারিগরি স্তরেও অভিন্ন পাঠ্যবই থাকবে। সব মিলে দেশে চালু হচ্ছে একমুখী শিক্ষা।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মূল হাতিয়ার হলেন শিক্ষকরা। কিন্তু দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যেসব শিক্ষক নিযুক্ত আছেন কিংবা যে নতুন শিক্ষাক্রম আসছে তা বাস্তবায়নে এই বিপুলসংখ্যক শিক্ষককে প্রস্তুত করা কতটুকু সম্ভব সেটা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। রূপরেখায় ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা রাখা হয়নি। পরীক্ষা ছাড়া মূল্যায়ন কীভাবে হবে কিংবা শিখনকালীন মূল্যায়নের প্রক্রিয়াটা কেমন হবে-সেটা নিয়েও অভিভাবকরা জানতে চাচ্ছেন।
এছাড়া অষ্টম শ্রেণি পর্যন্তও পরীক্ষার বদলে শিখনকালীন মূল্যায়ন রাখা হয়েছে ৬০ শতাংশ। আর এই মূল্যায়ন নিয়ে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ও শঙ্কা হচ্ছে, কতটুকু নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছতার সঙ্গে এই মূল্যায়ন হবে। কেননা মূল্যায়নটি থাকছে বিদ্যালয়-মাদ্রাসার শিক্ষকদের হাতে।
প্রস্তাবিত রূপরেখায় ব্যবসায় শিক্ষা, ইতিহাস, ভূগোল ইত্যাদি বিষয়গুলো নেই। অর্থাৎ, এ বিষয়গুলো আগের মতো আলাদাভাবে দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে রূপরেখা প্রণয়ন কমিটির সদস্যরা বলছেন, বিভিন্ন বিষয়ের সমন্বয়ের মাধ্যমে দশটি বিষয় সাজানো হয়েছে। তাই সাদা চোখে ইতিহাস, ভূগোল, পদার্থবিজ্ঞান বা ব্যবসায় শিক্ষার বিষয়গুলোকে আলাদা বিষয় হিসাবে দেখা না গেলেও এই বিষয়গুলো সমন্বিতভাবে রাখা হয়েছে। এ দশটি বিষয়ের মধ্যে পাঁচটি একাডেমিক বিষয় রাখা হয়েছে। বাকি পাঁচটি বিষয় সম্পূর্ণরূপে নির্দিষ্ট থিম ভিত্তি করে সাজানো হয়েছে। ফলে বাংলা, ইংরেজি, বিজ্ঞান, গণিত ইত্যাদি একাডেমিক বিষয়গুলোও স্বতন্ত্র না থেকে পারস্পরিক সম্পর্কযুক্তভাবে প্রকাশিত হয়েছে।
অন্যদিকে মাধ্যমিকে সবার জন্য বৃত্তিমূলক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। নবম-দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, মানবিক, বাণিজ্য বিভাগের বিভাজন না রাখা নিয়েও প্রশ্ন আছে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। অনেকের মাঝেই প্রশ্ন, তাহলে বিজ্ঞান শিক্ষার গুরুত্ব কমে যাবে কিনা।
আর উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে গিয়ে শিক্ষার্থীরা চাপের মুখে পড়ার ঝুঁকি আছে কিনা- এ প্রসঙ্গে রূপরেখার সদস্যরা জানান, রূপরেখা অনুযায়ী ১৬ বছর বয়সের পর ক্যারিয়ার ঠিক করে সেই অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের বিষয় নির্বাচনের সুযোগ রাখা হয়েছে। কেননা, বর্তমানে কোনো শিক্ষার্থী কী পড়বে- নবম শ্রেণিতে তা অনেকটাই বাবা-মা চাপিয়ে দেন। এতে শিক্ষার্থীর মেধা, আগ্রহ, প্রবণতা ইত্যাদি বিবেচনা পায় না। অন্যদিকে এসএসসিতে বিভাগ হওয়ায় সমন্বিত শিক্ষা বিঘ্নিত হচ্ছে। তাই অষ্টম থেকে দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞানের গুরুত্ব অন্য বিষয়গুলোর তুলনায় বেশি রাখা হয়েছে, যাতে সমন্বিত বিষয় হিসাবে থাকলেও এ বিষয়গুলো অধিক গুরুত্ব পায়। এটা অনুযায়ী শিখনসময় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে বর্তমানে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে বাংলা-ইংরেজির মতো সাধারণ বিষয়ে যত গুরুত্ব দেওয়া হয়, নতুন পদ্ধতিতে তা কমিয়ে নৈর্বাচনিক বা বিভাগভিত্তিক বিষয়ে গুরুত্ব বেশি রাখা হয়েছে।
এদিকে বর্তমানে চালু থাকা সৃজনশীল পরীক্ষা পদ্ধতি থাকছে না। বিভিন্ন আদলে মূল্যায়নের পাশাপাশি এমসিকিউ এবং বর্ণনামূলক প্রশ্নও থাকবে। প্রশ্ন হচ্ছে, এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অভ্যস্ত হতে পারবে কিনা। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে পরপর পাবলিক পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ আনবে কিনা- সেটাও অভিভাবকদের বড় প্রশ্ন।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে শিক্ষার্থীদের চাপ না বেড়ে বরং কমার সম্ভাবনা বেশি। কেননা, প্রচলিত পদ্ধতিতে দ্বাদশ শ্রেণির শেষে শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে দুই বছরের পাঠের ওপর পরীক্ষা দিতে হয়, যা তাদের জন্য বড় ধরনের চাপ। এখন আলাদাভাগে পরীক্ষা হওয়ায় এ চাপ অনেক কমে আসবে। পাশাপাশি একাদশ শ্রেণির কোনো কোর্সে রেজাল্ট খারাপ হলে পরের বছর পরবর্তী ব্যাচের সঙ্গে সেই কোর্সের মানোন্নয়ন পরীক্ষার সুযোগ থাকছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরোনো খবর এখানে,তারিখ অনুযায়ী

Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© All rights reserved © 2024 dainikkushtia.net
Maintenance By DainikKushtia.net